প্রেম, জীবনের এক
অবিচ্ছেদ্য অংশ। সৃষ্টির সেই উষালগ্ন থেকেই বয়ে আসছে মানব-মানবীর প্রেম। প্রেমে
সৃষ্টি, প্রেমে বিনাশ, পেমে গড়া জগৎ-সংসার। প্রেম আছে বলেই গাছে ফুল ফোটে, নদীতে
ঢেউ ওঠে, পাখি গান গায়। প্রেম আছে বলেই পৃথিবীটা বন্ বন্ করে ঘোরে, সূর্য ওঠে,
সূর্য অস্ত যায়। পৃথিবীতে যদি মানব-মানবীর প্রেম না থাকত, তাহলে হয়তো পরিবার প্রথা
বলে কিছু থাকত না, জীবনের সংজ্ঞা হতো অন্য রকম। প্রেম-ভালোবাসার জন্যেই মানুষ স্বপ্ন
দেখে, ঘর বাঁধে আর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের আঁকা বাঁকা পথে অবিরাম ছুটে
চলে।
প্রেম কীঃ এখানে আমি শুধু মানব-মানবীর প্রেম নিয়ে কথা
বলছি। এক্ষেত্রে প্রেম হচ্ছে নারীর প্রতি পুরুষের অথবা পুরুষের প্রতি নারীর প্রগাঢ়
মমত্ববোধ বা মায়া। এই মায়ার আরেক নামই হচ্ছে ‘প্রেম’ বা ‘ভালোবাসা’। একটি প্রেমের
সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে যা যা ঘটে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে শুধু এই ‘মায়া’। এক
জনের প্রতি আরেক জনের এতো বেশি মায়া লাগে বলেই তারা কেউ কাউকে ছেড়ে আলাদা থাকতে
পারে না। কষ্ট হয়। তাই তো প্রেমের বাঁধনে বাঁধা পড়লে মানব-মানবীর একমাত্র চাওয়া
হয়ে ওঠে বাকি জীবন দু’জনে একসাথে কাটাবার ধর্মীয় এবং সামাজিক স্বীকৃতি তথা পরিণয়
বা বিয়ে। বলাই বাহুল্য যে, এটাই হচ্ছে প্রেমের একমাত্র কাঙ্ক্ষিত পরণতি।
মানব-মানবীর প্রেমের উৎস
অন্য একটি জায়গায়, তা হলো- জৈবিক চাহিদা বা সেক্সুয়াল ডিম্যান্ড। যদিও এ বিষয়টি
মাথায় রেখে কেউ প্রেম করে না। অবশ্য এটা মাথায় রাখা বা না রাখায় কিছু এসে যায়
না, কারণ এ পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়
মানুষের মস্তিষ্কে যা প্রত্যক্ষভাবে বোঝা যায় না। মানব দেহে যত প্রকার আবেগী বিষয়
আছে, তা সবই হরমোনগত এবং হরমোনের কাজ-কর্ম সবই আমাদের মনের অজান্তে হয়ে থাকে। প্রেমকে
যদি আমরা একটি দালানের সাথে তুলনা করি, তাহলে সেক্স হচ্ছে সেই দালানের ফাউন্ডেশান
বা ভিত্তি। মাটির ওপরে শুধু দালানটিকেই দেখা যায়, তার ভিত্তিটি দেখা যায় না। কারণ
ভিত্তি থাকে মাটির নিচে। অনুরূপভাবে আমরা শুধু প্রেমকেই অনুভব করি, কারণ তা বোঝা
যায় এবং প্রকাশ করা যায়। কিন্তু মনের মধ্যে প্রেম কীভাবে সৃষ্টি হয়, সে বিষয়টি
আমাদের কাছে মাটির নিচে দালানের ভিত্তির মতোই থেকে যায়। কিছু কিছু প্রেমের সম্পর্ক
গড়ে ওঠে শুধুই জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্যে। এ ধরনের সম্পর্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
কুরুচিপূর্ণ এবং অসম হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী’র
মধ্যে জৈবিক চাহিদার বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। যে-কোন একজন যদি এ চাহিদা পূরণে
অক্ষম হয়, তাহলে তাদের প্রেম তখন ফিকে হয়ে যায়, ভেঙে যায় অনেক সাজানো সংসার। মায়ার
বাঁধন তাদেরকে আর এক ছাদের নিচে ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ তারা প্রমাণ করে দেয়
যে, দেহ ভিন্ন প্রেম নেই।
মানুষ বিভিন্নভাবে প্রেমে
পড়ে। যেমন-
১.
প্রাকৃতিকভাবেঃ জীবনের পথে চলতে
চলতে দু’জনার দু’টি নদী একই মোহনায় এসে মেশে। দু’জন দু’জনার প্রতি আকর্ষিত হয়।
দু’জন দু’জনকে অনুভব করতে থাকে। একই সাথে উভয়ের মনোবীণায় বেজে ওঠে প্রেমের সুর।
উভয়েই বুঝতে পারে যে, তারা পরস্পরের জন্যে অপরিহার্য। তখনই শুরু হয় কাছে আসা, চোখে
চোখ রাখা, মন দেয়া-নেয়া। এভাবেই দু’টি মানব-মানবী পরস্পর প্রেমের বাঁধনে বাঁধা
পড়ে।
২. এক
পাক্ষিক প্রস্তাবের মাধ্যমেঃ এক্ষেত্রে একটি
ছেলে একটি মেয়ের প্রতি অথবা একটি মেয়ে একটি ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাকে নিয়ে
কল্পনার ক্যানভাসে রং-বেরঙের ছবি আঁকে। শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু তারই ছবি। তার
জন্যে মায়া, তার জন্যে ভালোবাসা, তার জন্যে স্বপ্নের ভুবন গড়া। মনে হয়, তাকে ছাড়া
জীবনের সবকিছু ধূসর হয়ে যাবে। তখন সে কোন না কোনভাবে অন্য পক্ষকে তার মনের কথা
জানায়। আর অন্য পক্ষ যদি এতে সম্মতি দেয়, তাহলে তাদের মধ্যে একটি প্রেমের সম্পর্ক
তৈরি হয়।
৩. অভিনয়
করতে করতেঃ মানুষের জীবন বড়
বিচিত্র। জীবনের বাঁকে বাঁকে চাওয়া পাওয়ার অসামঞ্জস্য। তাই মানুষকে অনেক সময় বাধ্য
হয়ে অনেক কিছু করতে হয়। বাস্তব জীবনে প্রেমের অভিনয় আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে। মানুষ
কেন প্রেমের অভিনয় করে, সে আলোচনায় না হয় না-ই বা গেলাম। তবে ইচ্ছায় হোক বা
অনিচ্ছায় হোক, অনেক মানুষ অনেক সময় প্রেমের অভিনয় করে আর অভিনয় করতে করতে এক সময়
সে সত্যি সত্যি ওই মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলে, ওই মানুষটার প্রেমে পড়ে যায়।
কোন্ বয়সে
প্রেম শুভঃ যে প্রেম নিয়ে
এতো কথা, এতো গান, যে প্রেম জীবনের জন্যে অপরিহার্য, যে প্রেম জীবনে আসে বেঁচে
থাকার নতুন মানে নিয়ে, সে প্রেমই আবার জীবনকে ঠেলে দেয় গভীর অন্ধকারে। কোথায়, কখন,
কীভাবে, সেটাই আমাদের জানবার বিষয়। প্রেম শাশ্বত, চিরন্তন, অবিনশ্বর। পৃথিবীতে
সবকিছুরই নিয়ম-কানুন বা ব্যাকরণ আছে, কিন্তু প্রেমের কোন ব্যাকরণ নেই। অবশ্য
বর্তমান যুগে প্রেমেরও কিছু ব্যাকরণ তৈরী হয়েছে। সেটা কেমন, তা একটু পরে বলছি। তার
আগে প্রেমের বয়স সম্পর্কে কথা বলি। আসলে প্রেমের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। সাবালক-সাবালিকা
হবার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে-কোন বয়সেই প্রেম আসতে পারে। তবে সব বয়সের
প্রেম জীবনের জন্যে শুভ হয় না।
প্রাইমারি
স্কুলঃ প্রাইমারি স্কুলে,
অর্থাৎ চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে অনেক বাচ্চা ছেলে মেয়েকে প্রেমে পড়তে দেখা যায়। এ
ধরনের প্রেমের নজির আমি নিজের চোখে দেখেছি। বয়সের তুলনায় এ ধরনের ছেলে মেয়েদের
মেন্টাল গ্রোথ্টা একটু বেশি থাকে। প্রেম সম্পর্কে এরা একটা ধারণা পায় যে, এটা খুব
উপভোগ্য ব্যাপার। তাই তারা প্রেমে পড়ে। এ বয়সের প্রেম যদি না ভাঙে, অর্থাৎ এই
সম্পর্কটাকে তারা যদি সামনের দিকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে তারা যখন বড় হবে তখন এ
প্রেম লায়লা-মজনুর প্রেমের রূপ ধারণ করবে। এ বয়সে বাচ্চারা যাতে প্রেমে না পড়ে,
সেজন্যে অভিভাবকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
ষষ্ঠ থেকে
অষ্টম শ্রেণিঃ ষষ্ঠ শ্রেণি
থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে সমস্ত ছেলে মেয়েরা প্রেমে পড়ে, তাদের প্রেম বেশির
ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। এরা না শিশু, না ম্যাচিউর্ড। এদের কাছে প্রেমটা
হচ্ছে অধূমপায়ীর সিগারেটে একটা টান দিয়ে কাশতে কাশতে বমি করে দেয়ার মতো। প্রেমের
পরিণতি বিয়ে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এ বয়সের ছেলে মেয়েরা অতোদূর পর্যন্ত ভাবতে
পারে। এদের যে প্রেম, সেটাকে ইংরেজিতে বলা যেতে পারে ইলুশান, যার অর্থ হচ্ছে মোহ।
এই ‘ইলুশান’ সদৃশ প্রেম তাদের মনের ওপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করে। ফলে এ সময়ে তাদের
স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ এবং শিক্ষা জীবনের কার্যক্রম (নিয়মিত স্কুলে যাওয়া এবং
লেখাপড়া করা) মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই এ বয়সে কোনভাবেই প্রেমে জড়ানো
চলবে না। তোমরা যারা এ বয়সটাতে আছ, তাদেরকে বলছি- ভুলেও কখনও এ পথে যেয়ো না। প্রেম
করার জন্যে তোমাদের এ সময়টা মোটেও উপযোগী নয়। তোমাদের প্রেম করার সময় সামনে। তোমরা
সে সময়ের জন্যে অপেক্ষা কর। এ বয়সে যদি কখনও প্রেমে পড়ার মতো পরিস্থিতি আসে, তাহলে
তোমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিজেকে কান্ট্রোল কর। প্রয়োজনে মা-বাবার সাথে কথা বল।
তাঁদের পরামর্শ মেনে চল। তাহলেই তোমরা সুন্দর একটা জীবন গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে
পারবে।
নবম থেকে
দ্বাদশ শ্রেণিঃ নষ্ট হয়ে যাওয়া
জীবনগুলো নিয়ে যদি গবেষণা করা হয়, তাহলে আমার বিশ্বাস- বেশির ভাগ জীবনের নষ্টের
সূচনাটা পাওয়া যাবে এই বয়সে। এই বয়সটা জীবনের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই
বয়সটা একই সাথে জীবন গড়ার সময় অথবা ধ্বংস হওয়ার সময়। এ বয়সে ছেলে মেয়েরা দুইটি সার্টিফিকেট
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এ দুই পরীক্ষায় তারা যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারে, তাহলে
ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়, যা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে
নিশ্চিত করে। অন্যদিকে রেজাল্ট খারাপ হলে তারা উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় না, আর
পেলেও ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ভাগ্যে জোটে না। ফলে তাদের বড় স্বপ্নের রং চটে
যেতে শুরু করে। এ বয়সে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন কারণে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। তার
মধ্যে একটি হচ্ছে প্রেমে পড়া। এ সময়ে তারা ৪০% থেকে ৬০% ম্যাচিউর্ড হয় এবং
পরিপূর্ণভাবে যৌবনে পদার্পণ করে। তাই প্রেমকে তারা খুব বেশি গুরুত্ব দেয়। এমনকি
প্রেমের পরিণতির ব্যাপারেও তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এ সময় তারা যদি
লেখাপড়ার চেয়ে প্রেমকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাদের জীবনে সর্বনাশ
নেমে আসবে। অতএব, এ বয়সে প্রেম না করাটা হবে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। এ
বয়সে প্রেম করা আর আগুনে হাত দেয়া একই কথা। এদের জন্যে আমার একটাই পরামর্শ- তোমরা
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হও। নিজেকে যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পার, তাহলে যেমন জীবন-সঙ্গী বা জীবন-সঙ্গিনী চাও, তেমনই তোমরা
পাবে। আর যদি লেখাপড়ার চেয়ে প্রেমকে বেশি মধুময় মনে হয়, তাহলে আজ মনের মণিকোঠায়
লিখে রাখ- তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে হারাবে, জীবনের সিঁড়ি থেকেও পড়ে যাবে।
তোমার একূল ওকূল দু’কূলই যাবে। সারা জীবন তুমি হয়তো নিজেকে ধিক্কার দেবে আর চোখের
জল ফেলবে। মনে রেখো- জীবনের জন্যেই প্রেম, প্রেমের জন্যে জীবন নয়। জীবনই যদি
না থাকে, তাহলে প্রেম থাকে কী করে? জীবন
যদি বাঁশি হয়, তাহলে প্রেম হচ্ছে তার সুর। ভাঙা বাঁশিতে যেমন সুর ওঠে না, তেমনি
ব্যর্থ জীবনেও প্রেমকে উপভোগ করা যায় না। তাই আগে জীবনের সফলতা নিয়ে ভাব, তারপর
প্রেমের সফলতা নিয়ে ভাব। এটাই সত্যি, এটাই বাস্তব। এর উল্টোটা যারা চিন্তা করে,
তারা বোকা, তারা মূর্খ। সারা জীবনের কান্না শুধু তাদেরই প্রাপ্য।
ইউনিভার্সিটি
লাইফের শুরু থেকে বিয়ের আগ পর্যন্তঃ প্রেম কখনোই
শতভাগ নিরাপদ নয়। তবে অন্যান্য বয়সের তুলনায় এ বয়সটা প্রেম করার জন্যে সবচেয়ে বেশি
নিরাপদ। এ সময়ে ছেলে মেয়েরা প্রায় শতভাগ ম্যাচিউর্ড হয়। তাই তারা প্রেমের ক্ষেত্রে পাগলামিটা
কম করে। লাইফ সম্পর্কে তারা বেশি সিরিয়াস থাকে। প্রেমের ব্যাপারে কোন
অহেতুক ঝুঁকি নেয় না। এ বয়সের বেশির ভাগ প্রেম পরিণয়ের দিকে গড়ায়। পারলে এ বয়সে
চুটিয়ে প্রেম করুন। তবে হ্যাঁ, এ সময়টাতেও কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মনে
রাখতে হবে যে, হুঁশ থাকতে বিপদ নেই। প্রেমের ক্ষেত্রে এমন মেয়ে নির্বাচন করুন যে
আপনার পাশে থাকবে উৎসাহ-উদ্দীপনার আলোক বর্তিকা হয়ে। তার অনুপ্রেরণা আপনাকে আপনার
স্বপ্ন পূরণের পথে বীরের মতো এগিয়ে যেতে
সাহায্য করবে। আর আপনি যদি মেয়ে হন, তাহলে এমন ছেলে নির্বাচন করুন যে আপনাকে
পুরোপুরি বুঝবে, আপনার প্রতি যত্নশীল হবে আর আপনাকে প্রবলভাবে ভালোবাসবে। দু’জন
দু’রকম মানসিকতার হলে চলবে না। দু’জনকে একই মানসিকতার অধিকারী হতে হবে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই জায়গাটা ঠিক করে নিতে হবে। হয় আপনি তার মতো হবেন অথবা
তাকে আপনার মতো বানাবেন। তাহলে আপনাদের প্রেমের সম্পর্ক মধুর হবে, দাম্পত্য জীবনেও
আপনারা সুখী হবেন।
অনেকে বিয়ের পরে প্রেম
করে আবার অনেকে নাতি নাতনির মুখ দেখার পরেও প্রেমে পড়ে। বাংলাদেশের সামাজিক
প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রেম একসাথে অনেকগুলো জীবনকে বিষময় করে তোলে। দয়া করে আপনারা
এ ধরনের প্রেম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখুন। ইতোমধ্যে যদি এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে
থাকেন, তাহলে একটু কষ্ট করে বেরিয়ে আসুন। আপনারা যে যা পেয়েছেন, তাই নিয়ে সুখী
থাকতে চেষ্টা করুন। “আপনি ভালো তো জগৎ ভালো।” এই কথাটা ভুলেও ভুলে যাবেন না। স্যাক্রিফাইস্
তথা ত্যাগ করতে শিখুন। ত্যাগ করা সংকীর্ণতা নয় বরং উদারতা। যে ত্যাগী, সে মহৎ।
আপনি নিশ্চয়ই নিজেকে মহৎ মনে করেন।
আগেই বলেছিলাম প্রেমের
ব্যাকরণ সম্পর্কে বলব। এবার সে প্রসঙ্গে আসি। গল্পে শোনা যায়, রাজকন্যা রাখালের
সাথে প্রেম করে, রাখালের হাত ধরে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যায়। আগেকার দিনে এ রকম ঘটনা
সত্যি ঘটত, নাকি এটা শুধুই গল্প, তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমান যুগে এমনটি ঘটে না
বললেই চলে। কারণ মানুষ এখন খুব বেশি প্র্যাক্টিক্যাল। ছেলেরা প্রেমে পড়ে প্রধানত,
মেয়েদের রূপ দেখে। সুন্দরী মেয়েদের জন্যে প্রেমিক থাকে স্কুল কলেজের গেইটে,
রাস্তার মোড়ে মোড়ে, দোকানে দোকানে, বাড়ির আসে পাশে। তাদের জন্যে জীবন দিয়ে দিতে
পারে এমন প্রেমিকের অভাব নেই। যে মেয়ে রূপসী নয় অথচ ধনীর দুলালী, তারও প্রেমিকের
অভাব হয় না। কিন্তু যে মেয়ে দেখতে সুন্দর নয় আবার বাবাও বড়লোক নয়, সে মেয়ের
প্রেমিকের সংখ্যা অনেক কম। এ তো গেল প্রেমিকদের প্রেমিকা নির্বাচনের ব্যাকরণ। এবার
আসি প্রেমিকাদের প্রেমিক নির্বাচনের ব্যাকরণে। স্কুল কলেজের মেয়েরা প্রেমের
ক্ষেত্রে সবার আগে দেখে ছেলেটি কতটা হ্যান্ডসাম্ বা সুদর্শন। কারণ ওই একটাই- এ
বয়সের মেয়েরা ইম্ম্যাচিউর। কিন্তু ইউনিভার্সিটির দৃশ্যটা
ভিন্ন। এখানে মেয়েরা ছেলেদের রূপের চেয়ে মেধাকে প্রাধান্য দেয়। কারণ তারা জানে,
যে-ছেলে মেধাবী, তার ক্যারিয়ার ঝক্ঝকা। ছেলেটি মেধাবী না হয়েও যদি ধনী পরিবারের
হয়, তাহলেও মেয়েদের তেমন কোন আপত্তি থাকে না। ছেলেটি ধনী পরিবারের, ছেলেটির
ভাই-বোন কম অথবা ছেলেটির পরিবার নির্ঝঞ্জাট- এ রকম ছেলে অনেক মেয়ের পছন্দের
তালিকায় শীর্ষে থাকে। কোন কোন মেয়ে ব্যক্তিত্ববান ছেলে পছন্দ করে আবার অনেক মেয়ে
নিরীহ প্রকৃতির ছেলে পছন্দ করে। কারণ নিরীহ ছেলেদেরকে ইচ্ছে মতো হ্যান্ড্ল করা
যায়।
এ প্রসঙ্গে বিয়ের
ব্যাপারটা না বললেই নয়। ধরুন, আপনি একজন পুরুষ। আপনি উচ্চ শিক্ষিত, আপনি উত্তম
চরিত্রের অধিকারী, কিন্তু আপনি বেকার অথবা কর্মজীবী হওয়া সত্ত্বেও আপনার পকেট মোটা
নয়। তাহলে আপনি আপনার মনের মতো মেয়েটিকে
জীবন-সঙ্গিনী করতে পারবেন না। আপনার দোষ কী? আপনার দোষ- আপনার টাকা নেই। আবার
আপনার কিছুই নেই, কিন্তু অনেক টাকা আছে। তাহলে শিক্ষিতা ও সুন্দরী মেয়েদের
মা-বাবারা তাঁদের মেয়েদেরকে তুলোয় মুড়ে সযতনে রেখে দেবেন আপনার জন্যে। আপনি পাবেন
আপনার মনের মতো জীবন-সঙ্গিনী। আপনি পুরুষ? তো কথা নেই, দু’হাতে টাকা কামান।
অবশ্যই সে টাকা যেন অর্জিত হয় সৎ পথে। পক্ষান্তরে,
আপনি একজন নারী এবং আপনি সুন্দরী অথবা আপনার পরিবার ধনাঢ্য অথবা আপনি অত্যন্ত
মেধাবী। তাহলে আপনিও আপনার স্বপ্নের পুরুষকেই পাবেন জীবন-সাথি হিসেবে। অন্যথায়
আপনার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না-ও ঘটতে পারে। মোটকথা, আপনি পুরুষ হন বা নারী,
প্রেম করতে চান অথবা বিয়ে, আপনাকে উপরিউক্ত ব্যাকরণের মধ্যে দিয়েই যেতে হবে, এ
ব্যাপারে আপনি মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন। অন্তত, আমাদের সমাজ এ কথাই বলে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের
বানানো এই নিয়মে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, প্রেম বা বিয়ের ব্যাপারে একজন নারী
বা পুরুষের যে বিষয়টা সবার আগে দেখা উচিত, সেটা হলো তার চরিত্র, ব্যক্তিত্ব আর
মনুষ্যত্ব। এগুলোই হচ্ছে মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য
কখনোই আত্মার সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে না। আত্মার সৌন্দর্যই হচ্ছে প্রকৃত সৌন্দর্য।
বাইরে যে সুন্দর, ভেতরেও সে সুন্দর হবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে, জীবনের
জন্যে অবশ্যই টাকা পয়সার প্রয়োজন আছে। সুখী হবার জন্যে হয়তো বা এটা প্রধানতম
উপকরণ, কিন্তু একমাত্র উপকরণ নয়। অঢেল টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সুখী নয় আবার
দিনে আনে দিনে খায়- এ রকম অনেক মানুষ আছে যারা সুখী। সুতরাং, রূপের বাহার অথবা
পয়সার ঝন্ঝনানি নয়- চরিত্র, ব্যক্তিত্ব আর মনুষ্যত্বের মানদণ্ডই হোক দু’টি
মানব-মানবীর যুগল জীবনের সেতুবন্ধন- এ আমার অন্তরের প্রার্থনা।
পুনশ্চঃ প্রেম স্বর্গীয়, প্রেম পবিত্র- এই বিশ্বাস
বুকে ধারণ করে যারা প্রেম করে, তারা স্বর্গের সুধা পান করে। আর যারা প্রেমকে
অসম্মান করে, প্রেমের গায়ে কলঙ্ক লেপন করে, তারা বিষের পেয়ালায় চুমুক দেয়। বাকি
জীবনে তারা আর ভালোবাসা পায় না। তারা প্রেম বিহীন যন্ত্রণাদায়ক জীবন নিয়ে বেঁচে
থাকে। পরিশেষে শুধু একটি কথাই বলব- যুগে যুগে পৃথিবীতে স্বর্গীয় প্রেমের জয়
হোক।
নোটঃ এই প্রবন্ধটি লেখার জন্যে আমি কোন বই-পুস্তক,
কোন ব্যক্তি, এমনকি অনলাইন রিসোর্স থেকেও কোন সাহায্য নিইনি। প্রেম সম্পর্কে আমার নিজস্ব
চিন্তা ভাবনাই এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। আমি যা লিখেছি, তার ব্যতিক্রমও আছে।
তবে ব্যতিক্রমকে উদাহরণ হিসেবে দেখবেন কিনা, সেটা আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। আমার
কোন কথার সাথে যদি আপনি একমত পোষণ করেন, তাহলে আপনি তা অনুসরণ করতে পারেন। অন্যথায়
যা পড়লেন, দয়া করে সব ভুলে যান।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং বাটনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্লগের ধারাবাহিক পোস্ট সম্পর্কে আপডেট পেতে আপনি আমার ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/ihtareq1971) লাইক দিয়ে নোটিফিকেশান অন রাখুন। এই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।