Tuesday, December 13, 2016

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের কারণ ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ



ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের কারণগুলো অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বিচার করলে হিলারি অতুলনীয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যদি এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভোট দিত, তাহলে হিলারি বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করতেন- এতে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু, হলো তার বিপরীতটা। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই বিষয়গুলোকে আমলে নেয়নি। আর ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এই যে, তিনি জনগণের মনের কথা বুঝতে পেরেছিলেন। জনগণের চাওয়ার সাথে ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মিলে গিয়েছিল, এটাও ট্রাম্পের জন্যে এক সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমার কাছে মনে হয়, ট্রাম্পের জয়ের পেছনে নিচের তিনটি কারণই অন্যতম।   
   
১. যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বঃ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অন্যতম চাওয়া হচ্ছে সারা বিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আর এই শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনায়ককে হতে হয় অযৌক্তিক, অনৈতিক বা বর্বর। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জনগনকে শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। জনগন জানত যে, বর্বরতার ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোন জুড়ি নেই। এ কারণেই জনগণ ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছে। আর্থাৎ ট্রাম্পকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এটাই প্রমাণ করল যে, তারা এখনও অসভ্য, বর্বর আর নিচুমনাই রয়ে গেছে। সভ্যতার এ স্বর্ণালি যুগে এসেও তারা উদার হতে পারেনি। এটা ভেবে আমি নিজেই বিস্মিত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সম্পর্কে এমন ধারণা আমার কখনোই ছিল না।    
                                                      
২. ইসলাম বিরোধী অবস্থানঃ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; বরং সমগ্র পশ্চিমা বিশ্ব বা বিশ্বের অন্য সকল অমুসলিম দেশই ইসলাম বিরোধী। ইসলাম বা মুসলিমদের কল্যাণ তারা কখনও চায় না। এটা সরাসরি কেউ প্রকাশ করে, কেউ করে না। পার্থক্য শুধু এটুকুই। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য এবং শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন যা ইসলাম বিদ্বেষী যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মন গলিয়ে পানি করে দিয়েছিল। ট্রাম্পের জয়ের পেছনে এটা একটা বড় কারণ। অবশ্য এই বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এটা তার চাল বা কৌশল ছিল। কারণ জয়ের পর এখন তিনি বলছেন যে, তিনি সকলের প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং সবাইকে নিয়ে একটি নতুন আমেরিকা গড়তে চান।       

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি ট্রাম্পেরঃ https://goo.gl/mlnlZj
হিজাব পরা মুসলিম মহিলাদের গুলি করা উচিত -ট্রাম্পঃ https://goo.gl/lqWwE0   
    
৩. ক্ষমতার পালা বদলঃ বিষেশ করে ১৯৮৯ সাল থেকে লক্ষ করলে দেখা যায়, আমেরিকানরা একই দলকে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় রাখেনি। অনেকটা পালাক্রমেই ক্ষমতা বদল হয়েছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে। ১৯৮৯ সালে ক্ষমতায় আসেন রিপাবলিকান দলের জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। তিনি এক মেয়াদ (চার বছর) ক্ষমতায় থাকেন। তারপর ডেমোক্র্যাট দলের বিল ক্লিনটন (দুই মেয়াদ), ক্লিনটনের পরে রিপাবলিকান দলের জর্জ ডব্লিউ বুশ (দুই মেয়াদ), তারপর আবার ডেমোক্র্যাট দলের বারাক ওবামা (দুই মেয়াদ)। ক্ষমতা বদলের এই ধারাবাহিকতায় এবার ছিল রিপাবলিকানদের পালা। আমেরিকানরা স্বেচ্ছাচারিতা বা একঘেয়েমি রোধ করতে রাষ্ট্রক্ষমতার এই অদল-বদল করে থাকে। আমি মনে করি, ট্রাম্পের জয়ের পেছনে এটাও একটা কারণ।  

ভবিষ্যতে কী হতে পারেঃ ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্বে শান্তি বিরাজ করবে- এটা আপাতত আশা করা যায় না; বরং ঠাণ্ডা-বিশ্ব গরম হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। বাকিটা সময় এবং পরিস্থিতিই বলে দেবে। বর্তমানে যুদ্ধ-বিগ্রহের চিন্তা থেকে মানুষ অনেকটা বেরিয়ে এসেছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা সবাই বোঝে, সে কারণে সহজে কেউ যুদ্ধে জড়াতে চায় না। এই যে ভারত-পাকিস্তান, যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন, তারা বড় ধরনের কোন যুদ্ধে জড়াবে না- এটাই আমার বিশ্বাস। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোন সম্ভাবনাও নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কোনদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে, তাহলে আমি মোটেও অবাক হব না। আমার এই কথার সাথে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক। ট্রাম্পকে যতটুকু বুঝলাম, তা থেকেই আমার এ আশঙ্কা। যুক্তরাজ্যের মানুষ ব্রেক্সিট করার পরে এখন অনুশোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও একদিন অনুশোচনা করবে যে, ট্রাম্পকে নির্বাচিত করা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আজ ভাঙনের সুর উঠেছে। এই সুর যদি মধুর থেকে মধুরতম হয়, তাহলে ভেঙেও যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাবেন কোথায়? রাশিয়াকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাঙনের স্বাদ গ্রহণ করতে হতে পারে। কারণ পাপ করে কেউ রেহাই পায় না, আর শক্তি বা ক্ষমতাও কারও কাছে চিরদিন থাকে না। এটাই জগতের রীতি, স্রষ্টার বিধান।                     
 ..................................................................
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং বাটনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্লগের ধারাবাহিক পোস্ট সম্পর্কে আপডেট পেতে আপনি আমার ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/ihtareq1971) লাইক দিয়ে নোটিফিকেশান অন রাখুন। এই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ    
    

Sunday, June 19, 2016

বাবা (কবিতা)





যদি প্রশ্ন কর, ‘কাকে ভালোবাস?’
বলব, ‘বাবা’।  
যদি জানতে চাওয়া হয়, ‘গভীর রজনীতে
একাকী এক আঁধিয়ার ঘরে
যখন দু’চোখে ঘুম আসে না,
তখন কারে জপতপ কর?’
আমি হাসি মুখে সেই জবাব দেব-
‘তিনি শুধুই বাবা।’

বাবা আমার ধ্যান, বাবা আমার জ্ঞান
বাবা আমার মসজিদ, বাবা আমার মন্দির
আমি বাবার পায়ের পাদুকা-নিচে
ক্ষুদ্র-খর্ব ধূলকণা।  

আমি নিঃশব্দে দাঁড়িয়েছি সমুদ্র-সৈকতে
নীলাভ-নীর ভালো লাগে না,
মানসপটে ভেসে ওঠে বাবার ছবি।
তরঙ্গমালার তর্জন-গর্জন
আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না,
শুধু শুন্‌তে পাই বাবার কথার প্রতিধ্বনি।

আমি নরকের আগুন দেখিনি
দেখেছি জনকের মলিন বদন,
সে-বদন আমাকে জ্বালায় নরকের অগ্নির মতো।
আমি স্বর্গের ফুল দেখিনি
দেখেছি বাবার মুখের হাসি,
সে-হাসি আমার কাছে স্বর্গের ফুলের মতো।

যাঁর জন্যে আমি শরীরের শেষ রক্তবিন্দুও
অবলীলায় ঝরাতে পারি,
তিনি বাবা।
হৃদয়ের তন্ত্রী ছিঁড়ে যে ভালোবাসার আকুতি,
তা শুধুই বাবার জন্যে।

যাঁকে রাজাধিরাজ বানাতে গিয়ে
এই দুরন্ত বিশ্বরণাঙ্গনে
আমি বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হই,
তিনি ‘বাবা’ নামের দেবতা।         
আমি বাবা-দেবতার চরণ-তলে
খুঁজি জান্নাতের সুখ।
............................................................
কাব্যগ্রন্থঃ ঝরাফুল
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০০৪           
............................................................
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং বাটনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্লগের ধারাবাহিক পোস্ট সম্পর্কে আপডেট পেতে আপনি আমার ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/ihtareq1971) লাইক দিয়ে নোটিফিকেশান অন রাখুন। এই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।   

Monday, June 13, 2016

আত্মবিশ্বাস (কবিতা)



যদি চোখের আলো না থাকে তোর
মনের আলোয় দেখিস।
যদি পা দু’খানা চলতে না চায় তবু
মনের জোরে চলিস।
যদি ভয় কখনও বুকটা চেপে ধরে
তাকে গলায় টিপে মারিস।
যদি হোঁচট খেয়ে রক্ত ঝরে পায়ে
তবে আবার উঠে হাঁটিস।
যদি চলার পথে ক্লান্তি আসে দেহে
সেথা বটের ছায়ায় বসিস্‌।
যদি কান্নার জলে চোখ ভেসে যায় কভু
হাসতে চেষ্টা করিস।
যদি না জ্বলে তোর মনে জ্ঞানের আলো  
বাহুতে বল রাখিস।
যদি বাধার পথে আঁধার নেমে আসে
তবে আলোর আশায় থাকিস
যদি জীবনটাকে একটু ভালোবাসিস
তবে বাঁচার মতো বাঁচিস
যদি যায় হারিয়ে সবকিছু তোর ওরে
দু’হাত খুলে রাখিস।
আবার ও-হাত উঠবে সোনায় ভরে
বিশ্বাসে বুক বাঁধিস।
বীরের মতো এগিয়ে যাবি রেখে মনের বল
জয় হবে তোর সুনিশ্চিত, চল্‌রে পথিক চল্‌।
.........................................................
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে নিচের সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং বাটনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্লগের ধারাবাহিক পোস্ট সম্পর্কে আপডেট পেতে আপনি আমার ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/ihtareq1971) লাইক দিয়ে নোটিফিকেশান অন রাখুন। এই পোস্টে ইতিবাচক মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ