মানুষ পৃথিবীতে আসে, আবার একদিন এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। আসা-যাওয়ার এই
প্রাত্যহিক খেলার নামই জাগতিক জীবন। এ খেলা যিনি খেলছেন, তিনি পরম করুণাময়,
সর্বশক্তিমান আল্লাহ, ঈশ্বর বা গড। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি যে, কেন আমরা এ
পৃথিবীতে আসলাম? স্রষ্টা কেন আমাদেরকে এখানে পাঠালেন? আমার মনে হয়, এ প্রশ্নের
উত্তর খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন নয়। স্রষ্টা আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন কিছু
নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে। প্রথমত, তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করা, দ্বিতীয়ত, তাঁর সৃষ্টির
জন্যে কাজ করা অর্থাৎ দেশ, সমাজ ও মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা। কিন্তু আমরা কি
তা করি? কিছু মানুষ হয়তো করি, বেশির ভাগ করি না। জ্ঞান হবার পর থেকে আমরা সবাই হয়ে
যাই জীবন যুদ্ধের সৈনিক। ছোট-বড়, ধনী-গরীব সবাই আমরা ছুটে চলি শুধু নিজেকে নিয়ে।
নিজের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্যে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করি। কেউ সফল হই, কেউ বা
ব্যর্থ। কেউ দুধভাত খাই, আবার কেউ অনাহারে থাকি। যে যেভাবেই থাকি না কেন, জীবন
কিন্তু জীবনের নিয়মেই চলবে। মহাকালের ডাকে আমাদেরকে একদিন এই ক্ষণস্থায়ী জীবন,
রূপ-লাবণ্য, গর্ব-গৌরব আর প্রাচুর্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। সেখানে আমাদেরকে কৃত
কর্মের জন্যে প্রশ্ন করা হবে। আমরা সেদিন সঠিক জবাবটা দিতে পারব তো?
জীবনে আপনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেলেন। ধন-দৌলত, প্রভাব-প্রতিপত্তি কোনকিছুর অভাব
নেই আপনার। দুধভাত খেলেন, সোনার পালঙ্কে ঘুমালেন। কিন্তু দেশ, সমাজ বা মানুষের
জন্যে আপনি কিছুই করলেন না। একবার ভাবুন তো- এটা কোন জীবন হলো? পৃথিবীর বুকে যদি
পদচিহ্ন রেখে যেতে না পারেন, তাহলে পৃথিবী আপনাকে মনে রাখবে কেন? মানুষের জন্যে
যদি আপনি কিছু না করেন, তাহলে আপনার জীবনের সার্থকতা কোথায়? নেই, সার্থকতা নেই।
মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারাটাই জীবনের চরম সার্থকতা। এটাই সত্যি, এটাই জীবনের
প্রকৃত দর্শন। যুগে যুগে এ কাজটি যাঁরা করে গেছেন, তাঁরাই জগতে চির অমর। তাই আসুন,
আমরা শুধু নিজেকে নিয়ে না ভেবে আমাদের সমাজ, দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়েও ভাবি, যার
যার অবস্থান থেকে সাধ্যমতো কাজ করি।
দেশের কাদামাটি গায়ে মেখে আমরা বড় হয়েছি, দেশের বাতাস আমাদের প্রাণ শীতল করছে,
আজও আমরা বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছি, দেশ আমাদেরকে শিক্ষিত করেছে, দেশ আমাদেরকে কাজ
করবার সুযোগ দিয়েছে। এক কথায় আমরা যা যা পেয়েছি, তা সব দেশেরই দান। তাই আমরা সবাই
দেশের কাছে ঋণী। এই ঋণ পরিশোধ না করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া কি ঠিক হবে? মনে হয়,
উত্তরটা “না”। সুতরাং আমাদেরকে দেশের জন্যে কাজ করতেই হবে। তবেই আমাদের মুক্তি।
চলুন শুরু করা যাক আজই। পরিবারের পর প্রথমে আমাদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি,
গ্রাম, সমাজ, সমগ্র দেশ এবং সম্ভব হলে সমগ্র বিশ্ব। মানুষের জন্যে কাজ, মানবতার
কল্যাণে আত্মনিয়োগ। এটাই স্রষ্টার নির্দেশিত পথগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি।